পশু-পাখি হালাল বা হারাম হওয়ার মূলনীতি

পশু-পাখি হালাল বা হারাম হওয়ার মূলনীতি

মুফতি মাহমুদ হাসান

৩০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০

Share

Share

Tweetঅ+অ-

মহান আল্লাহ তাআলার সব বিধান তাঁর বান্দাদের কল্যাণের জন্য। যদিও বান্দা সব সময় তাঁর প্রতিপালকের দয়া, কল্যাণকামিতা উপলব্ধি করতে পারে না।

পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে এ বিধানও দিয়েছেন যে তারা যেন সেগুলোর মধ্যে হালাল খাদ্যই গ্রহণ করে এবং হারাম বস্তু ত্যাগ করে। কেননা হারাম খাদ্যে কেবল পরকালীন অকল্যাণই নয়, বরং তাতে রয়েছে পার্থিব ব্যাপক ক্ষতি। মহান আল্লাহ কোরআনে কারিমে রাসুল (সা.)-এর পরিচয় দিতে গিয়ে ইরশাদ করেন, 'যিনি তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ হালাল করবেন এবং নিকৃষ্ট বস্তুসমূহ হারাম করবেন। ' (সুরা আরাফ : ১৫৭)
খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে আল্লাহর বিশেষ একটি নেয়ামত হলো, আমিষজাতীয় খাবার। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, 'আর আল্লাহ তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তু, এতে তোমাদের জন্য রয়েছে শীত থেকে বাঁচার উপকরণ, তা ছাড়া আরো বহু উপকার রয়েছে এবং তা তোমরা খাদ্যবস্তু হিসেবে গ্রহণ করো। ' (সুরা নাহল : ৫)
পশু-পাখির ক্ষেত্রেও ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। এর মধ্যে কিছু হালাল আর কিছু হারাম করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন, বাস্তবেও সেগুলো নিষিদ্ধ হওয়ার যোগ্য।

কেননা নিষিদ্ধ প্রাণিকুলকে দেখা যায়, কখনো তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক, অথবা নাপাক, নিকৃষ্ট ও ঘৃর্ণিত, যা একজন জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেকসম্পন্ন মানুষ কখনো খেতে পছন্দ করে না। একটু চিন্তা করলে সেগুলোর মধ্যে আরো অনেক নিষিদ্ধের কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, 'হে মুমিনগণ! আমি তোমাদের জীবিকারূপে যে উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ দিয়েছি, তা থেকে খাও এবং আল্লাহর শোকর আদায় করো, যদি সত্যিই তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করে থাকো। তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত, শূকরের গোশত এবং ওই সব প্রাণী, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করা হয়। ' (সুরা বাকারা : ১৭২, ১৭৩)
প্রাণিজগতের হালাল-হারামের বিধানাবলি
সাধারণত প্রাণী দুই ধরনের : স্থলজ প্রাণী ও জলজ প্রাণী। জলজ প্রাণীর মধ্যে মাছ ছাড়া সব প্রাণী খাওয়া হারাম। বর্তমানে অনেককে দেখা যায়, ব্যাঙ, কাঁকড়া ইত্যাদি খেয়ে থাকে; তা সম্পূর্ণ হারাম।
মাছের মধ্যে মৃত মাছ খাওয়াও হালাল, চাই তা যে কারণেই মারা যাক, যেমন : পানি থেকে ওঠানোর কারণে, কোনো আঘাত পাওয়ায়, পানিতে কোনো বিষ মেশানোর কারণে বা সরাসরি সূর্যের তাপ পড়া ইত্যাদি কারণে মারা যায়- তা নষ্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত খাওয়া হালাল। হ্যাঁ, যে মাছ বিনা কারণে মারা যায়, তা খাওয়া মাকরুহে তাহরিমি। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমরা সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত (মাছ), শুকনায় উঠে যাওয়া মাছ খাও। আর বিনা কারণে মৃত মাছ খেয়ো না। (আবু দাউদ, হা. ৩৮১৫)
আর স্থলজ প্রাণী তিন প্রকার : এক. ওই সব প্রাণী, যার কোনো রক্ত নেই, যেমন মশা-মাছি, মাকড়শা, পিঁপড়া, টিড্ডি ইত্যাদি।
দুই. ওই সব প্রাণী, যার রক্ত থাকলেও তা প্রবাহিত রক্তবিশিষ্ট প্রাণী নয়, যেমন- সাপ, ইঁদুর ইত্যাদি। উভয় প্রকার প্রাণীর মধ্য থেকে শুধু রক্তবিহীন প্রাণী টিড্ডি খাওয়া হালাল আর বাকি সব ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট হওয়ায় সেগুলো খাওয়া হারাম।
তিন. ওই সব প্রাণী, যা প্রবাহিত রক্তবিশিষ্ট হয়, যেমন- সব ধরনের পাখি ও অন্যান্য চতুষ্পদ জন্তু। সেগুলো আবার দুই প্রকার : প্রথমত, পাখি। পাখিকুলের মধ্যে যেসব পাখি থাবা ও নখরবিশিষ্ট হয় যেমন- চিল, শকুন, বাজ, ঈগল ইত্যাদি খাওয়া মাকরুহে তাহরিমি। এটিও নিষিদ্ধের অন্তর্ভুক্ত। আর যেগুলো নখরবিশিষ্ট নয়, অর্থাৎ যা শুধু ঠোঁটের সাহায্যে খাবার গ্রহণ করে- এগুলো খাওয়া হালাল। এর মধ্য থেকে ওই সব কাক, যা শুধু নাপাকি ভক্ষণ করে সেগুলোও মাকরুহ; কিন্তু যেসব কাক বেশির ভাগ শস্যদানা, পোকামাকড় খায় সেগুলো হালাল।
দ্বিতীয়ত, পশু। বিধানগত দিক দিয়ে পশু দুই প্রকার : হিংস্র পশু, যা থাবা মেরে আক্রমণ করে খায়। সেসব পশু খাওয়া হারাম। যেমন- বাঘ, সিংহ, শিয়াল, কুকুর, বিড়াল, বানর, হাতি ইত্যাদি।
দ্বিতীয় প্রকার হলো অহিংস্র পশু। অহিংস্র পশুর মধ্যে যেগুলোর সর্বাঙ্গ পাক, সেগুলো খাওয়া হালাল। যেমন- গৃহপালিত গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট, দুম্বা। অনুরূপ বন্য পশুর মধ্যে বন্য গরু, হরিণ, খরগোশ, বন্য গাধা। আর যেগুলোর সর্বাঙ্গ নাপাক, তা খাওয়া হারাম। যেমন- শূকর। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, 'তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত, শূকরের গোশত। ' (সুরা বাকারা : ১৭৩)
যেসব প্রাণী খাওয়া মাকরুহ

Comments