লিভারের রোগের ধরন
লিভারের রোগ জন্ডিসের প্রধান কারণ। আমরা যা কিছুই খাই না কেন তা লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়। লিভার নানা কারণে রোগাক্রান্ত হতে পারে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাসগুলো লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি হয় যাকে বলা হয় ভাইরাল হেপাটাইটিস। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বেই জন্ডিসের প্রধান কারণ এই হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলো। তবে উন্নত দেশগুলোতে অতিরিক্ত মধ্যপান জন্ডিসের একটি অন্যতম কারণ।
এ ছাড়া অটোইমিউন লিভার ডিজিজ এবং বংশগত কারণসহ আরও কিছু অপেক্ষাকৃত বিরল ধরনের লিভার রোগেও জন্ডিস হতে পারে। ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়ও অনেক সময় জন্ডিস হয়। তা ছাড়া থ্যালাসিমিয়া ও হিমোগ্লোবিন ই-ডিজিজের মত যে সমস্ত রোগে রক্ত ভেঙ্গে যায় কিংবা পিত্তনালীর পাথর বা টিউমার এবং লিভার বা অন্য কোথাও ক্যান্সার হলেও জন্ডিস হতে পারে। তাই জন্ডিস মানেই লিভারের রোগ এমনটি ভাবা ঠিক নয়।
রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে যেসব কারণ জানা গেছে তা জেনে নিই।
১. লিভার প্রদাহ: লিভার প্রদাহে বিলিরুবিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জন্ডিস সৃষ্টি হয়। ২. পিত্তনালীর প্রদাহ: পিত্তনালীর প্রদাহে বিলিরুবিন শোষণ ব্যাহত হয়। ফলে বিলিরুবিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। ৩. পিত্তনালীর ব্লকঃ পিত্তনালীতে ব্লক হলে লিভার বিলিরুবিন সরাতে ব্যর্থ হয়। বেয়ে যায় জন্ডিসের সম্ভাবনা। ৪. গিলবার্ট’স সিন্ড্রোম: এই অবস্থায় এনজাইমের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে পিত্তের রেচনতন্ত্রে সমস্যা হয় এবং বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ৫. ডুবিন-জনসন সিন্ড্রোম: এই বংশগত রোগে লিভার থেকে বিলিরুবিন শোষণ হতে বাঁধা দেয়। ফলশ্রুতিতে জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
জন্ডিস (ইংরেজি: Jaundice) যা ইক্টেরাস (ictetus) নামেও পরিচিত,[১] আসলে কোন রোগ নয়, এটি রোগের লক্ষণ মাত্র। জন্ডিস হলে রক্তে বিলরুবিনেরমাত্রা বেড়ে যায় ফলে ত্বক,স্ক্লের বা চোখের সাদা অংশ ও অন্যন্য মিউকাস ঝিল্লি হলুদ হয়ে যায়।[২]রক্তে বিলিরুবিনের ঘনত্ব 1.2 mg/dL এর নিচে থাকে (25 µmol/L এর নিচে)। 3 mg/dL বা 50 µmol/L এর বেশি হলে জন্ডিস হয়।[৩] jaundice শব্দটি ফরাসি শব্দ jaunisse, থেকে এসেছে যার অর্থ হলুদাভ।
১. হেপাটাইটিস-এ ও ই খাদ্য ও পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। আর বি, সি এবং ডি দূষিত রক্ত, সিরিঞ্জ এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই সব সময় বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানি খেতে হবে। শরীরে রক্ত নেয়ার দরকার হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করাটাও খুবই জরুরী। ২. মদ্য পান থেকে বিরত থাকুন। ৩. কল কারখানার রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকুন। ৪. নেশাদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। ৫. ব্যবহারকৃত ইনজেকশন কিংবা নাক-কান ফোঁড়ানোর সুই ব্যবহার করবেন না। যারা সেলুনে সেভ করেন, তাঁদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আগে ব্যবহার করা ব্লেড বা ক্ষুর আবারো ব্যবহার করা না হয়। ৬. নিরাপদ যৌনমিলন করুন। ৭. হেপাটাইটিস এ এবং বি হওয়ার আশংকা মুক্ত থাকতে হেপাটাইটিস এ এবং বি এর ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন।
Comments
Post a Comment